১০ টি উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন
চিত্র : মুরগি |
ভূমিকা : পৃথিবীতে প্রায় কয়েকশো জাতের মুরগি রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরে নারীরা মুরগি পালন করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করেছেন। নিচে ১০ টি উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
উন্নত জাতের মুরগির নাম :
সসেক্স, হোয়াইট লেগহর্ন, সোনালী, আইএসএ ব্রাউন, গ্রাম প্রিয়া, আসিল, বাবুর ডি এভারবার্গ, ইনগ্রিডো, খাসিকা, কুলাঙ্গি, পুস্টি, সাবজওয়ারি, কমিউন, কালো ট্রপজা লেগবিবাজ, তিরানা, ট্রপোজা পেক, ইয়েরেভেনিয়ান, অস্ট্রালর্প, অস্টেলিয়ান ল্যাংসহ্যান, অস্ট্রেলিয়ান গেম, অস্ট্রেলিয়ান পিট গেম, অল্টস্ট্রেরিয়ার, সালমটলার, আর্ডেনাইস বা আর্ডেন্নের, আর্ডেন্নের বোলস্টার্ট, বেলজিয়ান দাড়িওয়ালা ডিয়ানভার্স, বার্ব ডে বেইস্টফোর্ট, বার্ব ডে গ্রুব, বার্ব ডে ওয়াটারমিল, বেলজিয়ান ডি এভারবার্গ, দাড়িওয়ালা ডি'উক্কেল, বাসসেট লেয়েগওয়েস, ব্রাবেন্টার, ব্র্যাকেল, ক্যাম্পাইন, কম্ব্যাটেন্ট ডে বার্গেস, কম্ব্যাটেন্ট ডে লেইগ, কম্ব্যাটেন্ট ডে ট্রিলামন্ট, কুকু ডি'লযেজেম, কুকু ডে ফ্লাডেরেস, ফেমেনৌইস, ফৌভ ডে মেহেগনে, ফৌভ ডে হেসবায়া, হার্ভিহোন, হুটজেম, মেলিন্স, ম্যাচেলসি, নেইন বেলজ, নেইন ডু ওয়েস, নেইন ডু টৌরনাইসিস, পৌন্ডিউস, পৌল ড'আর্সকট, পৌল দে লা ভিন, পৌল ডু জোট্টারজে, ব্ল্যাক শ্যামন, রেডশেভার, আরাউসানা, কোচিন, ক্রোড ল্যাংসহ্যান, নেনকিন, পেকিন, সিল্কি, হার্ভেটিকা, কুবালায়া, সিপ্রোইট, চেক গোল্ড ব্রিন্ডেল, সুমাভাংকা, আলেকজান্ড্রিয়া, আর্বিক্রেস, বেহিগ, ব্যান্ডারা, বোফফেন, ড্যান্ডারাইউ, ডক্কি, বালাভী বেহেরি, ফায়ৌমি, গিম্মিজাহ, স্বর্নালী মোনটাজ, ইভেন, সালাম, সিনাই, আলহো, ইনসহাস, খেরভিস, ম্যান্ডারাহ, ম্যাটোরৌহ, রুপালী মোনটাজ ইত্যাদি।
প্রাকৃতিকভাবে দেশি মুরগি পালন :
আমাদের গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরেই প্রাকৃতিক উপায়ে মুরগি পালন করে। একটি বাড়িতে স্বল্প খরচে ১০ থেকে ১৫ টি মুরগি অনায়াসে লালন পালন করা যায়। মুরগি সাধারণত বাড়ির আশেপাশের বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড়, কেঁচো, কচি ঘাস লতাপাতা, বাড়ির ফেলে দেওয়া পচা বাঁশি খাবার ইত্যাদি খেয়ে থাকে।প্রকৃতি থেকে এরা খাওয়ার সংগ্রহের কারণে এদের খাওয়ার খরচ খুবই কম হয়। দেশি মুরগি পালনে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এই মুরগি বাড়িতে লালন পালনে অনেক ঝামেলাও রয়েছে। মুরগি খোলা পরিবেশে থাকার কারণে বাড়ির আনাচে কানাচে বা বাড়ির আশেপাশে অন্যান্য বাড়িতে গিয়ে ডিম পেড়ে আসে। অনেক সময় দেখা যায় শিয়াল, বেজির আক্রমণের কারণে এদের মৃত্যু ঘটে।
উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন :
আমরা বাজারে গেলেই সাধারণত ব্রয়লার, সোনালী, কক সহ নানা প্রজাতির মুরগি দেখতে পাই। কিন্তু এদের থেকে বাড়িতে স্বাভাবিকভাবে পোষা দেশি মুরগি গুলোর চাহিদা অনেক বেশি। কেননা এই মুরগির মাংসের স্বাদ অন্যান্য মুরগির মাংস থেকে খুবই সুস্বাদু। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষক গণ এসে নারী ও পুরুষদের উন্নত পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে অনেক নারী ও পুরুষেরা উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। এতে করে অনেক নারী-পুরুষ উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগির খামার তৈরি করে তাদের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করছেন।
দেশি মুরগির ঘরের বিবরণ :
মুরগির ঘর বা খামার তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেই স্থানটি উঁচু এবং রাস্তা বা লোকালয় থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে। মুরগির ঘর সাধারণত পূর্ব পশ্চিম দিকে হলে ভালো হয়। একটি মুরগির জন্য ১ বর্গফুট করে ঘর নির্মাণ করতে হবে। ঘরের দৈর্ঘ্য যদি ৪ ফুট হয় তাহলে প্রস্থ হবে ১ ফুট। এমনিভাবে ১০০ টি মুরগির জন্য যদি ঘর নির্মাণ করা হয় তাহলে সেই ঘরের দৈর্ঘ্য হতে হবে ২০ ফুট এবং প্রস্থ হবে ৫ ফুট। আর যদি ১০০০ টি মুরগির জন্য তৈরি করা হয় তাহলে তার দৈর্ঘ্য হবে ৬০ ফুট এবং প্রস্থ হবে ১৫ ফুট। ঘরের বেড়াতে বাঁশের বাতা, কাঠের তক্তা, নেট অথবা তার জালি ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। ঘরের চালায় টিন, পলিথিন অথবা ত্রিপল ব্যবহার করা যাবে। তবে অবশ্যই অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে চালার নিচে যেন তাপ প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকে।
১০০ টি দেশি মুরগি পালনে খরচ :
১০০টি দেশি মুরগি পালনের জন্য অবশ্যই ১০০ স্কয়ার ফুট জায়গার প্রয়োজন হবে। এর কম হলে মুরগি বিভিন্ন রোগ বালায়ে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি তাদের শারীরিক বৃদ্ধিতেও বাধাপ্রাপ্ত হবে। প্রথম অবস্থায় ১০০ টি দেশি মুরগি পালন করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে।
১০০ স্কয়ার ফুট একটি ঘর নির্মাণের জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ১০০ দেশি মুরগি পালন করতে হলে তাদের সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে খাওয়ার প্রদান করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে রোগ প্রতিরোধক টিকা, সঠিক রোগ নির্ণয় করে এন্টি বায়োটিক প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সুষম খাদ্য ও ঔষধ এর জন্য প্রায় ২০০০ টাকা মতো খরচ হবে। তবে যদি সঠিকভাবে দেশি মুরগির বাচ্চা নির্বাচন করা যায় তাহলে মুরগি পালনের খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
দেশি মুরগি পালন ও চিকিৎসা :
অন্যান্য মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাই দেশি মুরগির রোগ বালাই এর পরিমাণ অন্যান্য মুরগি দের থেকে কম। দেশি মুরগি সাধারণত রানীক্ষেত, গামরোরো, কক্সিডিওসিস, মাইক্রোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগ বেশি দেখা দেয়। রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের পাউডার অথবা ক্যাপসুল পানি অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে তিনবার খাওয়াতে পারেন। বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে যদি উপরোক্ত যেকোনো রোগের উপসম দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। আপনি যদি পারিবারিক অথবা ক্ষুদ্র খামারি হয়ে থাকেন তাহলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। অনেকে মনে করেন দেশি মুরগির কোন ভ্যাকসিন অথবা টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কথাটা একেবারে ঠিক নয়। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করেন তাহলে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন অথবা টিকা দিতে হবে।
বাড়ির ছাদে মুরগি পালন পদ্ধতি :
বর্তমানে গ্রাম বা শহরে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফলমূলের বাগান করে থাকেন। এগুলোর পাশাপাশি বাড়ির ছাদে মুরগি পালন করা যেতে পারে। মুরগি পালনের একাধিক পদ্ধতি রয়েছে বাড়ির ছাদে মুরগি পালনের জন্য অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে খাঁচা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিশেষভাবে তৈরিকৃত খাঁচার মধ্যে মুরগি পালন করা হয়। এই পদ্ধতিটা মুরগি পালন করলে তুলনামূলক জায়গা অনেক কম লাগে। এছাড়াও এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মুরগির রোগ জীবাণুর আক্রমণ কম হয়। খাঁচা তৈরির কারণে খরচ একটু বেশি হলেও এই খাঁচা একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে নিয়মিত মলমূত্র পরিষ্কার করতে হয়। যদি প্রতিদিন পরিষ্কার না করা হয় সে ক্ষেত্রে মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। রোগ বালায়ের ক্ষেত্রে সন্দেহজনক কোন কিছু মনে হলে তাৎক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url